ডা: মো: আলমগীর হোসেন
ডিএইচএমএস,বিএইচবি (ঢাকা)।
দেশ জুড়ে চলমান তীব্র তাপ প্রবাহ মানুষের উৎকন্ঠা বাড়ছে। অতিরিক্ত গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে, অন্য দিকে শিশু সহ বিভিন্ন বয়সীরা ডাইরিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও জ্বর সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হয়ে অনেকেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ সহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা তপ্ত রোদে পুড়ে অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। চলমান তীব্র দাবদাহে হিট স্টোক থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। সেজন্য হিট স্টোক থেকে বাঁচতে নিম্নেলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলা দরকার।
হিট স্ট্রোক কি : হিট স্ট্রোক বা হিটস্ট্রোক , যা সান-স্ট্রোক নামেও পরিচিত, একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০.০ সে: (১০৪.০ ফা:) এর বেশি হয়, সাথে লাল ত্বক, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সাধারণত পরিশ্রমী হিটস্ট্রোকে ঘাম হয়, কিন্তু ক্লাসিক হিটস্ট্রোকে নয়। উচ্চ তাপমাত্রার অত্যধিক এক্সপোজার তাপ ক্লান্তির কারণ হতে পারে যা তাপ ক্র্যাম্প এবং হিট স্ট্রোকের দিকে অগ্রসর হয়। দীর্ঘায়িত তাপের সংস্পর্শে থাকার কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা হাইপারথার্মিয়া (শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার উপরে) সৃষ্টি করে।
বায়ুন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো খুলে যায়। এর জের ধরে রক্ত চাপ কমে যায় যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃদপিন্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ :
তীব্র মাথাব্যথা : প্রচন্ড গরমে মাথাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া গরমে মানুষের মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। এটি হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হতে পারে।
বমি বমি ভাব : মাথাব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন ও হাইপারভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির কারণে হিট স্ট্রোকের আগে বমি বমি ভাব হতে পারে।
প্রচন্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা : হিট স্ট্রোকের আগে ব্যক্তি চরম তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে, সেইসঙ্গে ডিহাইড্রেটেড এবং আড়ষ্টতা অনুভব করতে পারে। শরীর নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।
দ্রæত হৃদস্পন্দন : হিট স্ট্রোকের আগে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হতে পারে।
হাইপারভেন্টিলেশন : শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত ও ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসও হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।
বিরক্তি, বিভ্রান্তি বা প্রলাপ বকা : অতিরিক্ত তাপের কারণে হিটস্ট্রোকের আগে মানুষ বিরক্ত বোধ করতে পারে, রাগান্বিত হতে পারে, অযৌক্তিক কথা বলতে পারে এবং এমনকি প্রলাপ বকতে করতে পারে।
কথা জড়িয়ে যাওয়া : হিট স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ কথা জড়িয়ে যাওয়া। ব্যক্তি অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করতে পারে।
পেশিতে ব্যথা : হিট স্ট্রোকের আগে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তারমধ্যে একটি হলো পেশি ব্যথা। যদিও সাধারণ ব্যথা ভেবে মানুষ এটা গুরুত্ব দেয় না।
ঘাম না হওয়া : হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হল প্রচন্ড গরমেও ঘাম না হওয়া। সাধারণত এর মানে হচ্ছে, শরীরে ঘাম হওয়ার মতো পানি আর নেই বা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াটি কাজ করছে না।
দুর্বলতা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : অতিরিক্ত উত্তাপের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করে। শরীরে আরও ক্লান্তি ও দুর্বলতা তৈরি হয়। ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এগুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ।
হিট স্ট্রোক রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা :
রোগীকে প্রথম কাজ ছায়ায় নিতে হবে । আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে তার কাপড় খুলে দিন। সম্ভব হলে কাঁধ, বগল ও কুচকিতে বরফ দিন। রিহাইড্রেশন (পর্যাপ্ত তরল পান) করুন। ওর স্যালাইন সবচেয়ে ভালো। শুধু ঠান্ডা পানি হয়েও চলবে প্রথমে। আশপাশে পুকুর থাকলে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিন। পুকুর না থাকলে বাথ টাবে শুইয়ে দিন এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দিন। তাও না থাকলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিন। তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন। টেম্পারেচার না নামলে আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে দিন এবং ম্যাক্স স্পিড টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন। রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাবার স্যালাইন দিন ও দ্রæত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে : গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমন : হালকা, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। কাপড় সাদা বা হালকা রংয়ের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো। যথাসম্ভব ঘরের ভেতর বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে । বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন খাবার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই ফোটানো হতে হবে। এছাড়া নিম্নে বর্ণিত পানীয় সমূহ পান করলে হিট স্ট্রোকের ঝুকি হ্রাস পায়।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে যা খাবেন :
কাঁচা আমের শরবত , গরমে কাঁচা আমের জুস খুবই উপকারী। এটা শরীর ঠান্ডা রাখে এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ডাবের পানি, ডাবের গুণাগুণ সম্পর্কে প্রায় সবারই জানা। বাটারমিল্ক বা মাঠা : প্রতিদিন এক গøাস মাঠা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। পেঁয়াজের রস, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার অন্যতম ভালো উপায় হলো পেঁয়াজের রস। ধনিয়া ও পুদিনার শরবত, এই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শরবত গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে। যা উন্নতমানের ‘ডিটক্সিফাইইয়িং’ বা শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়ার জন্য উপযুক্ত পানীয়। খালি পেটে পান করলে তা শরীরের জন্য বেশি ভালো। অ্যালোভেরার শরবত , রোদপোড়া থেকে বাঁচতে অ্যালোভেরার শরবত অনন্য। এটা হজমে সাহায্য করে, বুক জ্বালাপোড়া কমায় এবং পেটের নানা রকম সমস্যা দূর করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো হলো :
তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতি পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন। গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন। গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা: মো: আলমগীর হোসেন
ডিএইচএমএস,বিএইচবি (ঢাকা)।
চেম্বার : তারা হোমিও ক্লিনিক
বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসেন আলী সুপার মার্কেট, ষ্টেশন রোড, বগুড়া।
০১৮৬০-৩৩১৯২০
Leave a Reply