বগুড়ায় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাড়ছে গাজর চাষাবাদ। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। জেলার গাবতলী উপজেলার তিনটি গ্রামে বেশি আবাদ হচ্ছে এ সবজির। এখন গাজর তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গত মাসে প্রতিমণ গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্য কাঁচা সবজির চেয়ে গাঁজর দীর্ঘ সময় ভালো থাকে, দ্রুত নষ্ট হয় না । এসব গাজর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অল্প সময়ে ফলন বেশি হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছেন জেলার চাষিরা। এছাড়া, অন্য ফসল চাষের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় জেলায় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭৪ হেক্টর জমিতে গাজর চাষাবাদ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় গাজর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ২৪ হেক্টরে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে গাজর চাষ। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে বলে জানায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর । স্থানীয় বাজারেও ব্যাপক চাহিদা থাকাই ক্ষেত থেকেই সব গাজর বিক্রি হইছে।
গাবতলী উপজেলার পাঁচমাইল গ্রামের গাজর চাষি ইন্তাজুল জানান, দশ বছর ধরে গাজর চাষ করছেন তিনি। গাজর এমন একটি ফসল যার চাহিদা সব সময়ই থাকে। এ কারণে বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে না। আবার দাম ও ভালো পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, এবার আমার এক বিঘা জমিতে প্রায় ৯০ মণ গাজর হয়েছে। মার্চ প্রতি মণ গাজর প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে চলতি মাসে দাম কমেছে শুরুর দিকে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মণও বিক্রি করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল নয় হাজার টাকার মত। খুব ভালোভাবে এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করতে পনের হাজার টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। আর বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় ৯০ মণের মত গাজর, যার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। এসব কারণে কৃষকদের কাছে গাজর চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়ার গাজর হেলাল উদ্দিন জানান, আলুর চেয়েও গাজর চাষাবাদ উৎপাদন বেশি হয়। আলু চাষাবাদে অনেক ঝামেলা হয়। কিন্তু গাজর চাষাবাদে তেমন কোন ঝামেলা নেই। তাই গাজর চাষাবাদে খরচ কম দাম ভালো পাওয়া গেছে।
গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, গত জানুয়ারি মাস থেকে এখানকার গাজর চাষিরা তাদের গাজর বগুড়াসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছে। সেসময়ে গাজরের দাম অনেক ভালো দামে বিক্রি করেছে। সেকারণে গাবতলী উপজেলার গাজর চাষিরা চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। লাভবান হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা গাজর চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক সোহেল মোঃ শামসুদ্দিন ফিরোজ জানান, বগুড়া জেলায় গাজরের মোট আবাদ ১৭৪ হেক্টর জমিতে। গত মার্চ মাস পর্যন্ত ১৬২ হেক্টর জমির গাজর কর্তন করা হয়েছে। মোট উৎপাদন ৪২১২ মে.টন। যার গড় ফলন ২৬ মে.টন/হেক্টর। তিনি আরও জানান, বাজার দর ভালো থাকায় জেলার কৃষকগণ গাজর চাষাবাদে ঝুকছেন। সেকারণে গত বছরের তুলনায় এ বছব বগুড়ায় গাজর চাষাবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে।
Leave a Reply